ওয়েব ডেস্ক: সতীর একান্ন সতীপীঠের অন্যতম বীরভূমের (Birbhum) কঙ্কালীতলা (Kankalitala)। শান্তিনিকেতনের অদূরে অবস্থিত এই স্থানে প্রতিবছর কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর (Kojagori Laxmi Puja) আগের দিন, অর্থাৎ ত্রয়োদশী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় এক বিশেষ আচার — একান্ন কুমারী পুজো (Ekanno Kumari Pujo)। এই দিনটি ঘিরে যেমন ভক্তসমাগমে ভরে ওঠে সমগ্র এলাকা, তেমনই দেশ-বিদেশের পর্যটকেরাও ছুটে আসেন এই অনন্য পুজো দেখার জন্য।
পুরাণে বর্ণিত, দেবী সতীর দেহ মহাদেবের তাণ্ডবের সময় ৫১টি খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পড়েছিল। সেই স্থানগুলিই আজ পরিচিত ‘একান্ন সতীপীঠ’ নামে। বিশ্বাস, কঙ্কালীতলা সেই শেষ পীঠস্থান, যেখানে সতীর হাড় অর্থাৎ অস্থি বা কঙ্কাল পড়েছিল। এখানেই দেবীরূপে পূজিতা হন মা কঙ্কালী, আর সেই কারণেই এই স্থান আধ্যাত্মিকভাবে বিশেষ পবিত্র।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীর সাজে শুধুই সোনা! আজও অমলিন উত্তরের এই কোজাগরী পুজো
স্থানীয় ইতিহাস বলছে, আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে কঙ্কালীতলার কাপাসটিকুড়ি গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায় মা কঙ্কালীর স্বপ্নাদেশ পান। দেবী তাঁকে নির্দেশ দেন একান্ন কুমারীকে একত্রে পুজো করার। সেই থেকেই শুরু হয় পঞ্চবটীর তলায় ৫১ কুমারী পুজোর প্রথা। বর্তমানে বুদ্ধদেববাবুর ছেলে কাঞ্চিশ্বর চট্টোপাধ্যায় এই বিশেষ কুমারী পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা।
৫১ কুমারী পুজো সম্পর্কে কাঞ্চিশ্বরবাবু জানান, “প্রতিবছর কঙ্কালীতলা ও আশপাশের গ্রাম থেকে ৫১ জন অল্পবয়সী কন্যাকে বেছে নেওয়া হয়। অভিভাবকরা তাঁদের সুন্দরভাবে সাজিয়ে আনেন, এবং পঞ্চবটীর নীচে দেবীর সম্মুখে কুমারী রূপে তাঁদের পুজো করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য সকলের মঙ্গল ও শান্তির প্রার্থনা।”
ত্রয়োদশীর সকাল থেকেই মন্দির প্রাঙ্গণে শুরু হয় প্রস্তুতি। ঢাকের বাদ্য, ফুলে সাজানো বেদি, আর ভক্তদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে কঙ্কালীতলা। আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে কঙ্কালীতলার একান্ন কুমারী পুজো আজ এক বিরল ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ভক্তদের বিশ্বাস, এদিন মা কঙ্কালী নিজে কুমারীরূপে ধরাধামে নেমে এসে আশীর্বাদ করেন।
দেখুন আরও খবর: